সৌদি আরবের ঐতিহাসিক ওহুদ পাহাড়
মদিনা নগরীর উত্তর দিকজুড়ে বিস্তৃত বিখ্যাত ওহুদ পাহাড়। মাথা উঁচু করে থাকা ওহুদকে মদিনা শহর থেকেও দেখা যায়। এই সেই বিখ্যাত পাহাড় যার পাদদেশে মক্কার কাফেরদের সাথে রাসূলের সা: যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওহুদ পাহাড় নিয়ে হাদিসে বর্ণনা আছে। ওহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সা: নিজে অংশ নেন। মুসলিম বাহিনীর বিজয়ের শেষ লগ্নে এখানেই সূচিত হয়েছিল মর্মন্তুদ ঘটনা। ৭০ জন মুসলিম বীর এই যুদ্ধে শহীদ হন। শহীদ হন রাসূলুল্লাহর সা: চাচা সাইয়্যেদুশ শুহাদা হজরত হামজা রা:। স্বয়ং রাসূল সা: এই যুদ্ধে আহত হন। ওহুদ যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কবরস্থান জিয়ারত করেন মদিনায় আগত প্রায় প্রত্যেক মুসলমানই। কাঁকরবিছানো শুহাদায়ে ওহুদের কবরস্থান রাসূল সা: নিজে জেয়ারাত করেছেন।২৪ মে রোববার আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় ওহুদের পাদদেশে। এলাকাটি এখন প্রাচীর দিয়ে কাচের দেয়ালে ঘেরা। পাদদেশের নিকটেই ছোট্ট আকারের আরেকটি পাহাড়ের চূড়া। রুমান পাহাড়। এই পাহাড়ের ওপরই রাসূল সা: তাঁর ৪০ জন সাহাবিকে একটি সঙ্কীর্ণ গিরিপথ প্রহরায় নিয়োজিত রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে ছিল তীরন্দাজ বাহিনীও। রাসূল সা: নির্দেশ দিয়েছিলেন কোনো অবস্থাতেই তারা যেন এই প্রহরা থেকে সরে না যান। এমনকি সম্মুখের বাহিনীর গোশত ছিঁড়ে খাওয়া দেখলেও তারা যেন এখানকার প্রতিরক্ষাকার্যক্রম থেকে নিবৃত্ত না হন। যুদ্ধের প্রথম দিকে কাফের বাহিনী পিছু হটতে থাকে। প্রবল বিক্রমে এগিয়ে যেতে থাকেন রাসূলের সা: সাহাবিরা। সঙ্কীর্ণ গিরিপথ প্রহরার দায়িত্ব ছিল আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়েরের নেতৃত্বে একদল সেনার। যুদ্ধে মুশরিকদের পরাজয় দেখে তারা আর স্থির থাকতে পারেননি। রাসূলের সা: কঠোর নির্দেশ উপেক্ষা করেন তারা। ঐতিহাসিকেরা বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের তাঁর সাথে থাকা প্রহরারত বাহিনীকে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা নিষেধ উপেক্ষা করে পলায়নপর মুশরিকদের পিছু ধাওয়া করেন এবং নিজেদের অবস্থান ছেড়ে দেন। দূর থেকে খালিদ বিন ওয়ালিদ তা দেখে অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে সঙ্কীর্ণ গিরিপথ অতিক্রম করে পেছন থেকে মুসলিম বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে যায়। রাসূলের সা: বর্ম ভেদ করে তাঁর পবিত্র শরীরে তীর বিদ্ধ হয়। সাহাবিরা রা: রাসূলকে ঘিরে মানববর্ম তৈরি করেন। রাসূলের সা: দানদান মোবারক শহীদ হয় এ যুদ্ধে। হজরত আবু বকর রা: হজরত ওমর ফারুক রা: প্রমুখ এ যুদ্ধে রাসূলের সা: সাথী ছিলেন। তৃতীয় হিজরিতে সংঘটিত এ যুদ্ধে মক্কার কুরাইশদের সংখ্যা ছিল তিন হাজার। সাথে ছিল অশ্বারোহী বাহিনী। আর মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র সাত শ’। এর মধ্যে অশ্বারোহী বাহিনী ছিল অনুল্লেখযোগ্য। তা সত্ত্বেও মুসলিমরা যুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় বিজয় লাভ করে। পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার কারণে তারা পরাজিত হয়। তবে কুরাইশরা বিজয়লাভের পরও দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেছিল কেন তা আজো ঐতিহাসিকদের কাছে বিস্ময়কর। আমরা শুহাদায়ে ওহুদের কবরস্থান জেয়ারত ও কোবা মসজিদ পরিদর্শন শেষে মদিনায় ফিরে আসি। বিকেলে পরিদর্শন করি মসজিদে নববী সংলগ্ন মদিনা মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে অনেক পুরনো দুর্লভ কুরআন ও হাদিস গ্রন্থ এবং রাসূলের সা: সময়ের কিছু ঐতিহাসিক দলিলের অনুলিপি সংরক্ষিত আছে। মিউজিয়ামের অভ্যন্তরে এর কলাকুশলীরা সফরকারীদের ব্রিফ করেন। আমাদের জানানো হয়, রাসূল সা: যখন মদিনায় আসেন তখন কিছু দিন তিনি বিখ্যাত আনসার সাহাবি আইউব আল আনসারির রা: বাড়িতে ছিলেন। এরপর নিজ গৃহ ও মসজিদে নববীর নির্মাণকাজ শেষ হলে তিনি সেখানেই ওঠেন। রাসূল সা:-এর জন্য প্রথম যে ঘর তৈরি করা হয়েছিল তা ছিল খেজুরের ডালপালা ও মাটির প্রলেপ দিয়ে তৈরি। তিন থেকে পাঁচ মিটার আয়তনের একটি কক্ষে নবীজি সা: বসবাস করতেন। একটি সাধারণ খাটিয়ার ওপর রাসূলুল্লাহ সা: ঘুমাতেন। খেজুর পাতার তৈরি মাদুরে ঘুমাতেন দোজাহানের বাদশাহ। সিরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে, হজরত ওমর ফারুক রা: একদা রাসূলের সা: পিঠে খেজুর পাতার বড় বড় দাগ দেখে কেঁদে উঠে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সা: আপনার পিঠে এত দাগ! আপনি এমন বিছানায় ঘুমান? মিউজিয়ামে কর্মকর্তাদের কাছে আমরা সেসব সোনালি দিনের কথা শুনি। রাসূলের সা: জামানার ঐতিহাসিক দলিল দেখে মুগ্ধচিত্তে তাকিয়ে থাকি আমরা।
ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ
ٱلْعَٰلَمِين
0 comments:
Post a Comment