কয়েকদিন থেকে উত্তরায় আছি। বাসার পাশের মসজিদে নামাজ পড়ি। নামাজে দাঁড়িয়েই প্রথমে পাশের জনের পায়ের সাথে মিলিয়ে কাতার সোজা করে নিই। একদিন পা মিলাতে গিয়ে দেখি আমার ডান পায়ের পাশে কোন পা নেই। অবাক হয়ে দেখি আমার পাশের ভদ্রলোক এক পা নিয়ে জামাতে দাঁড়িয়েছেন। তার বাম পা কোমর থেকে কাটা। সুবাহানাল্লাহ! আল্লাহু আকবর। জামাতে সামনের কাতারে অনেকেই বয়সের ভারে চেয়ারে বসে নামাজ পড়ে আর ইনি এক পা নিয়েও দাঁড়িয়ে আছেন। পুরো নামাজে দেখছি কত কষ্ট করে এই মানুষটি নামাজ পড়ছে। তার তাকওয়া দেখে, এই ভয়ংকর অঙ্গহানির পরও মহান আল্লাহ্র প্রতি তার কৃতজ্ঞতাবোধ দেখে মনটা এতটুকু হয়ে গেল।
আরেকদিন হলের মসজিদে নামাজ পড়ছি দেখি আমার পাশের জন কেমন জানি বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাতার থেকে একরকম বেরিয়ে গিয়ে নামাজ পড়ছে। খুব বিরক্ত লাগছিল দেখে। কিন্তু সালাম ফিরিয়ে দেখলাম ছেলেটা অন্ধ। কৃতজ্ঞতায় মনটা ছোট হয়ে গেল। এই মানুষগুলো আমাদের মত সুস্থ নয়। আল্লাহ এদেরকে অনেক কিছু দেননি যা আমাদের দিয়েছেন। কারো হাত নেই, পা নেই, কারো চোখ নেই।আল্লাহ্র বিচারকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করার মত অনেক যুক্তি এদের কাছে আছে। কিন্তু অভিযোগ না করে সেই মহান রবের প্রশংসায় সিজদাবনত হতে দেখে এত ভাল লাগে। আলহামদুলিল্লাহ্
আমার দুইটা পা আছে। আলহামদুলিল্লাহ্
আপনি কেন মহান আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞ হবেন না? একবার নিজের শরীরের দিকে তাকান। শরীরের প্রতিটা অঙ্গের কথা চিন্তা করুন। চোখের পাপড়ি দেখে কি মনে হয়।? শরীরের ওজনের তুলনায় .০০০০০০০০০ something হবে এর ওজন। এগুলা না থাকলেই কি!! কিন্তু কেটে ফেলে দিয়ে দেখুন তো?? এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকবেন। ঘুমাতে পারবেন না, চোখ বন্ধ করতে পারবেন না। কারণ অতি নগন্য এই জিনিসটা চোখের দুই পাতার মধ্যে চেইনের মত কাজ করে। চোখ বন্ধ করলে এরা মাঝখানে চেইনের মত দুই পাতাকে আঁকড়ে ধরে। চিন্তা করুন মহান আল্লাহ আপাতদৃষ্টিতে অতি নগন্য মনে হওয়া এই জিনিসটিও আপনার জন্য যত্ন করে বানিয়েছেন। দুইটা সুস্থ সবল হাত, হাতের দশটা আঙ্গুলই ঠিক। কিন্তু ডানহাতের বুড়ো আঙ্গুলটা স্কচ টেপ দিয়ে আটকে রাখুন তো!! শার্টের বোতামটাও লাগাতে পারবেন না। বউকে ডাকতে হবে বোতাম লাগানোর জন্য। কৃতজ্ঞতায় আপনার বুকটা ভরে যাওয়া উচিত। সিজদায় পড়ে চোখের পানি ছেড়ে দেওয়া উচিত।
ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ
ٱلْعَٰلَمِين
0 comments:
Post a Comment